উদ্ভিদের রেচন পদার্থ (Excretion in Plants)
Published Date : 19-04-11
1676 Views

উদ্ভিদের রেচনের বৈশিষ্ট্য: উদ্ভিদের রেচন পদার্থগুলি প্রাণীদের তুলনায় কম জটিল এবং কম ক্ষতিকারক।
উদ্ভিদের রেচন পদার্থগুলি প্রাণীদের তুলনায় কম জটিল এবং কম ক্ষতিকারক।
উদ্ভিদ দেহে বিপাকীয় ক্রিয়ার হার কম হওয়ায় এদের দেহে রেচন পদার্থও কম উত্পন্ন হয়।
উদ্ভিদ দেহে উত্পন্ন রেচন পদার্থগুলির অধিকাংশই উপচিতি-বিপাকের মাধ্যমে বিভিন্ন কোশীয় দ্রব্যে সংশ্লেষিত হয়।
উদ্ভিদের রেচন পদার্থগুলির অধিকাংশই কোষে কেলাস বা কলোয়েড হিসাবে সঞ্চিত থাকে।
উদ্ভিদ দেহে কোনো নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ বা তন্ত্র না থাকায় প্রাণীদের মতো উদ্ভিদেরা কিন্তু রেচন পদার্থ দেহ থেকে নির্গত করতে পারে না।
উদ্ভিদের রেচন পদার্থ ত্যাগের পদ্ধতি কয়েকটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোনও কোনও উদ্ভিদ রেচন পদার্থ ত্যাগ করে, যেমন:
পত্রমোচন : পর্ণমোচী উদ্ভিদ, যেমন: শিমুল, শিরিষ, আমড়া, অশ্বত্থ ইত্যাদি বছরের নির্দিষ্ট ঋতুতে পত্রমোচন করে পাতায় সঞ্চিত রেচন পদার্থ ত্যাগ করে। বহু বর্ষজীবী চিরহরিৎ উদ্ভিদেরা সারা বছর ধরে অল্পবিস্তর পাতা ঝরিয়ে রেচন পদার্থ ত্যাগ করে।
বাকল মোচন: কোনও কোনও উদ্ভিদ যেমন: অর্জুন, পেয়ারা, ইত্যাদি গাছ বাকল বা ছাল মোচনের মাধ্যমে ত্বকে সঞ্চিত রেচন পদার্থ ত্যাগ করে।
ফল মোচন : লেবু, তেঁতুল, আপেল ইত্যাদি ফলের ত্বকে বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড (যেমন; সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড) রেচন পদার্থ হিসাবে সঞ্চিত থাকে। ওই সব উদ্ভিদ পরিণত ফল মোচন করে দেহ থেকে রেচন পদার্থ অপসারণ করে।
উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ এবং তাদের অর্থকরী গুরুত্ব:
নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ :
গঁদ বা গাম : গঁদ জলে দ্রবণীয় এক রকম বর্জ্য পদার্থ। সাধারণত সেলুলোজ দ্বারা গঠিত উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর বিনষ্ট হলে গঁদ উত্পন্ন হয় । প্রাকৃতিকভাবে বা কোনও আঘাতের ফলে গঁদ উদ্ভিদের কান্ড ও শাখার বাকল থেকে নিঃসৃত হয়।
উৎস: সজিনা, আমড়া, শিরিষ, জিওল, বাবলা, শিমূল প্রভৃতি গাছের ছাল বা বাকল থেকে গঁদ নিঃসৃত হয়।

অর্থকরী গুরুত্ব : গঁদ বিভিন্ন শিল্পে, বিশেষ করে কাষ্ঠশিল্প এবং বই বাঁধাই-শিল্পে আঠা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। জুতা তৈরি ও মেরামতিতে গঁদ আঠা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কর্পুর পায়েস, মিষ্টান্ন ইত্যাদি প্রস্তুতিতে গঁদ ব্যবহৃত হয়।
রজন : রজন ঈষৎ হলুদ রংয়ের জলে অদ্রবণীয় এক ধরনের জটিল বর্জ্য পদার্থ । রজন তিন রকমের হয়। যথা:
কঠিন রজন: চাঁচ গালা এই রকম রজনের উদাহরণ । এই রকম রজন অ্যালকোহলে দ্রবণীয়।
ওলিও রজন: তরল রজন। টারপেনটাইন এই রকম রজনের উদাহরণ।
গঁদ রজন : এই রকম রজন গঁদের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে, তাই অর্ধ-তরল এবং আঠাল। ধুনা, হিং ইত্যাদি গঁদ রজনের উদাহরণ।
উৎস: রজন সাধারণত পাইন গাছের কান্ড, শাখাপ্রশাখা ও পাতার রজন নালীতে সঞ্চিত থাকে। প্রাকৃতিকভাবে বা কোনও আঘাতের ফলে রজন উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে নিসৃত হয় । শাল গাছের বাকলে ধুনো সঞ্চিত থাকে। হিং পাওয়া যায় উক্ত গাছের ছালে।
অর্থকরী গুরুত্ব : গালা , টারপেনটাইন ভার্নিশ শিল্পে অর্থাৎ কাঠ রং করতে ও পালিশ করতে এবং সাবান ও ফিনাইল প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়। ধুনা পূজা-পার্বনে ব্যবহৃত হয়। হিং মিষ্টান্ন, পায়েস তৈরিতে ও মশলা রূপে ব্যবহৃত হয়।
তরুক্ষীর: তরুক্ষীর প্রোটিন, গঁদ, রজন, উপক্ষার প্রভৃতি বস্তুর জলীয় মিশ্রণ। এটি উদ্ভিদের দীর্ঘ তরুক্ষীর কোষ এবং তরুক্ষীর নালীতে সঞ্চিত থাকে। বট, আকন্দ, পেঁপে, কাঁঠাল, রবার প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর সাদা দুধের মতো হয়। কলা, তামাক প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর সাদা জলের মতো হয়। আফিং, শিয়ালকাঁটা প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর হলুদ রং -এর হয়।
উৎস: তরুক্ষীর বট, আকন্দ, পেঁপে, কাঁঠাল, রবার, ফণীমনসা, কলা, করবি, তামাক, আফিং, শিয়ালকাঁটা প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর কোষে বা তরুক্ষীর নালীতে সঞ্চিত থাকে। প্রাকৃতিকভাবে বা কোনও আঘাতের ফলে ওই সমস্ত উদ্ভিদের কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলে তরুক্ষীর নিসৃত হয়।
অর্থকরী গুরুত্ব: হিভিয়া ব্রাসিলিয়েনসিস নামে প্যারা-রবার গাছের তরুক্ষীর থেকে বাণিজ্যিক রবার প্রস্তুত হয়, যা থেকে টায়ার, টিউব, ইরেজার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রভৃতি নানা রকমের রবারের জিনিস প্রস্তুত হয় । পেঁপে গাছের তরুক্ষীরে প্যাপাইন নামে একরকম উৎসেচক থাকে, যা প্রোটিন পরিপাকে সহায়তা করে। উদ্ভিদদেহের তরুক্ষীর ক্ষত সরাতে সাহায্য করে।
উদ্ভিদের নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ:
উপক্ষার বা ক্ষারক পদার্থ : উপক্ষার একরকমের নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগিক পদার্থ। প্রোটিন ভেঙ্গে উপক্ষার সৃষ্টি হয়। উপক্ষার জলে অদ্রবণীয় এবং কোহলে দ্রবণীয় । এটি তরল বা কঠিন উভয় রকমেরই হতে পারে। উপক্ষার স্বাদে কষা বা তিক্ত।
বিভিন্ন উপক্ষারের উৎস ও অর্থকরী গুরুত্ব:

উপক্ষার উৎস প্রয়োজনীয়তা
রেসারপিন সর্পগন্ধা গাছের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমানো
ক্যাফিন কফি গাছের বীজ ব্যাথা বেদনার উপশমকারী
নিকোটিন তামাক গাছের পাতা উচ্চ রক্তচাপ কমানো
মরফিন আফিং গাছের কাঁচা ফলের ত্বক গাঢ় নিদ্রাতে সাহায্য করে ও বেদনার উপশমকারী
ডাটুরিন ধুতরা গাছের পাতা ও ফলের মধ্যে হাঁপানির প্রতিরোধকারী
কুইনাইন সিঙ্কোনা গাছের বাকল ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধকারী
স্ট্রিকটিন নাক্সভোমিকা বা কুচলা গাছের বীজ পেটের পীড়ার প্রতিরোধকারী

cloudquiz

5 1 vote
Article Rating
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments